প্রযুক্তি জগতে আসলে সবাই কোন না কোন সময়ে RAID এর নাম অবশ্যই শুনেছেন। তবে আসলে এইটা কি এবং কি কাজে দেয় এইটা নিয়ে হয়তোবা অনেকেই জানেন না। যারা জানেন না তাদের কে জানানোর জন্যেই আজকের আমাদের এই ক্ষুদ্র চেষ্টা।
RAID অর্থ হচ্ছে, Redundant Array of Inexpensive Disks. নাম শুনেই সাধারণ ধারণা চলে আসতে পারে যে, এটা স্টোরেজ বা তথ্য সংরক্ষণ সম্পর্কিত কোন বিষয়। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। আর আজকে আমরা কথা বলবো RAID ও RAID এর সব আত্মীয়-স্বজন অর্থাৎ RAID 0, 1, 10, 5 এবং 6 নিয়ে।
তো চলুন সময় নষ্ট না করে প্রথমেই আলোকপাত করা যাক RAID এর প্রাথমিক কিছু বিষয়েঃ
RAID সাধারণত ঘরোয়া কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের চেয়ে পেশাদাররা বেশি ব্যবহার করে থাকেন। পূর্বে মাদারবোর্ডে কোন RAID সেটাপ সংযুক্ত করা না থাকলেও বর্তমানের প্রায় সব বোর্ডেই এইটা আবশ্যকীয় ভাবে দেয়া থাকে বিধায় হোম ইউজাররাও এই RAID এর উপরে ঝুঁকছে। RAID ব্যাবহার করার মূল কারণ ই হলো একাধিক ড্রাইভ একত্র করে বেশি পারফরম্যান্স ও তথ্য সংরক্ষণের বিশ্বস্ততা অর্জন করা। বর্তমানের মাদারবোর্ড গুলো RAID 0, 1 এবং 10 কোন কার্ড ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে প্রয়োজন হলে এইক্ষেত্রে অবশ্যই প্রফেশনাল RAID কার্ড ব্যবহার করাই বেশি ভালো বলে আমি মনে করি। এতে সিস্টেম ফেইলিওর বা তথ্য হারানোর ঝুঁকি কম থাকে। । তো চলুন এদের নিয়ে বিস্তারিত বলা যাক।
RAID 0 :
RAID 0 এর কথা তুললে প্রথমেই বলতে হবে এইটা পুরোটাই গতি এবং পারফরম্যান্স এর জন্যে বানানো হয়েছে। তবে, তথ্য স্থানান্তর গতি বাড়বে যে হারে ঠিক সেই হারে তথ্য হারানোর ঝুঁকিও বাড়বে! জ্বি হ্যা, মানে RAID 0 এর রিলায়েবিলিটি একদম নিম্ন শ্রেনীর।
RAID 0 এর ক্ষেত্রে দু্টো ড্রাইভকে একত্র করে স্থান এবং গতি দ্বিগুণ করা হয়। যেমন, ৫০০জিবি এর দুটো এসএসডি কে একত্র করে ড্রাইভ বানানো হবে একটি, যার কারণে এর মোট ধারণক্ষমতা হবে ১০০০জিবি এবং দুই ড্রাইভের গতির সমন্বয়ে গতি ও হবে দ্বিগুণ। অর্থাৎ সাটা ৩.৬০ জিবি/সেকেন্ড দুটো এসএসডি একত্র করলে গতি হবে প্রায় ১২জিবি/সেকেন্ড। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি কখনোও একটা এসএসডি নষ্ট হয় তাহলে সব তথ্যই হারাতে হব। Speed over the cost of reliability বলা যায় যাকে।
RAID 1 :
RAID 0 এর মত হলেও তবে এর কাজ পুরাপুরি তার বিপরীত। তার মানে এইখানে দুইটা ৫০০জিবি একত্র করার পরেও স্থান থাকবে ৫০০জিবি। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আমার আরেকটি ড্রাইভ কোথায় গেল! ওই ড্রাইভটিও আছে, তবে মিররড(Mirrored) হয়ে। কেউ যদি ২টি ড্রাইভের গতি ও ধারণক্ষমতার পরিবর্তে একটা ড্রাইভের ড্রাইভের গতি ও ধারণক্ষমতা নিয়ে নিজের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে চায় তাদের জন্যে হচ্ছে এই RAID 1. এখানে একটা ড্রাইভে যেই তথ্য রিড ও রাইট হয় ঠিক একই তথ্য অন্য ড্রাইভে সাথে সাথে মিরর হয়ে যায়। যে কারণে কোন কারণে একটা ড্রাইভ নষ্ট হয়ে গেলেও অন্য ড্রাইভে সব খুঁজে পাওয়া যায় কোন সমস্যা ছাড়াই। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার কম্পিউটারে RAID 1 ব্যাবহার করি স্পর্শকাতর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে।
RAID 10 :
RAID 10 বলতে গেলে RAID 0 এবং RAID 1 কে একসাথে মেশালে যা পাওয়া যাবে তাই। যদিও এইটা একেবারে নিখুঁত সমাধান না হলেও এটাকে বলা যায়,’রেইড কার্ড ব্যবহার না করে পাওয়া সম্ভাব্য সেরা সমাধান।’ RAID 10 এর জন্যে সর্বনিম্ন ৪ টা ড্রাইভ প্রয়োজন। চাইলে আরো বেশি যোগ করা সম্ভব; তবে আমি চারটার উদাহরনই দিতে যাচ্ছি এখানে।
এইক্ষেত্রে ৪টা ড্রাইভে তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে। তবে দুটোয় থাকবে RAID 1 এর বৈশিষ্ট্য; দুটোয় থাকবে RAID 0 এর বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ এই সেটাপে গতি ও বিশ্বস্ততা দুটোই পাওয়া যাচ্ছে। এই সেটাপে দুইটা ড্রাইভ যদি কোন কারণে নষ্ট ও হয়ে যায় তবুও আমরা সম্পূর্ণ তথ্য পুনরুদ্ধার করতে পারছি।
এইবার চলে যাওয়া যাক প্রফেশনাল দিকে, অর্থাৎ RAID5 & RAID6.
RAID 5 :
RAID 1 এর মতন RAID 5 মুলত তথ্য রক্ষা করার জন্য বানানো হয়েছে। এই ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তিনটি ড্রাইভ দরকার যেখানে একটা ড্রাইভকে রিজার্ভড রাখা হয় যাতে যেকোন প্রকার ড্রাইভ ফেইলিওরে এই ড্রাইভ নষ্ট হয়ে যাওয়া ড্রাইভে থাকা তথ্য পুনরুদ্ধার করতে পারে। অর্থাৎ আপনার ৬টি ড্রাইভ থাকলে আপনি ক্যাপাসিটি পাবেন ৫টি ড্রাইভের। যেহেতু এটি স্ট্রাইপ আকারে তথ্য সব ড্রাইভে ছড়িয়ে রাখে তাই আপনি অনেক দ্রুত তথ্য দেখতে পারবেন। তবে ভালো মানের রেইড কার্ড ছাড়া এতে রাইট করা অনেক সময় সাপেক্ষ আর যদি কোন ড্রাইভে ফেইল করে তাইলে ঐ ড্রাইভের ডাটা পুনরুদ্ধার করাও হবে অনেক বেশি সময়ের ব্যাপার।
RAID 6 :
RAID 6 মূলত RAID 5 এরই আরও বিশ্বস্ততর ভার্সন। এটি ড্রাইভ ফেইলিওর থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে এবং সব হারানো ডাটা আবারোও পুনরুদ্ধার করতে পারে ড্রাইভের রিজার্ভে সংরক্ষিত ডাটা সাইকেল দিয়ে। এইটার জন্যে সর্বনিম্ন ৪টি ড্রাইভ দরকার।তবে সাধারণত ৪টা ড্রাউভ নিয়ে কেউ RAID 6 ব্যবহার করেনা কারণ এইক্ষেত্রে RAID 10 সেরা সমাধান। তবে ড্রাইভ যখন আরও বেশির হয় তখন এই RAID 6 বেশ উপকারী। যেমন ৮ টা ড্রাইভ হলে RAID 6 এ ধারণক্ষমতা পাওয়া যাবে ৬ টা ড্রাইভের, যেখানে এইটা RAID 10 হলে পাওয়া যেত ৪ টার। RAID 6 বড় বড় মেইনফ্রেম কম্পিউটারে বেশি ব্যাবহার করতে দেখা যায়, যেখানে কোন কিছু হারানোর কোন সুযোগ নেই। যেমনঃ অনলাইন তথ্য সংরক্ষণ বা ইংরেজীতে যাকে বলা হয়, অনলাইন স্টোরেজ হোস্টিং। RAID 6 এর একটিমাত্র দূর্বলতা আমার চোখে পড়েছে যা হচ্ছে, RAID 6 RAID 5 অপেক্ষা স্লো রাইট করে।
RAID এর সুবিধা যতই থাকুক না কেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এর তেমন ভুমিকা দেখি না। তবে তার মানে এই না যে, এটা সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য একদমই কাজের জিনিস না। যারা মিডিয়া সার্ভার বা অনেক দিন ধরে মুভি বা গেইম বা সিরিজ অথবা পার্সোনাল ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করছেন তাদের জন্যে RAID একটা ভালো সমাধান। একই সাথে কম খরচে বেশি গতি ও বিশ্বস্ততা RAID ছাড়া কোথাও পাবেন না বলে আমি মনে করি।
আজ জানলেন আপনারা RAID এর সাধারণ ধারণা। কেউ যদি আরও বেশি তথ্য জানতে চান কিংবা নিজেই RAID সেটাপ করতে চান, এবং এ বিষয়ে স্টেপ বাই স্টেপ গাইড চান, তাইলে আমাকে কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন।